Wednesday, November 18, 2015

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা

কবুতর প্রতিপালন ব্যবস্থাপনা: বিস্তারিত তথ্য


ভূমিকা 
ইতিহাস থেকে জানা যায় বহু আদিকাল থেকে মানুষ কবুতর পালন করে আসছে। সে সময় মানুষ দেব-দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য কবুতর উৎসর্গ করতো। এছাড়াও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সংবাদ প্রেরণ, চিত্ত বিনোদন ও সুস্বাদু মাংসের জন্য কবুতরের বহুল ব্যবহার ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশেও প্রধানত মাংস ও চিত্ত বিনোদনের জন্য কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। 

কবুতর প্রতিপালনের প্রয়োজনীয়তা
কবুতর প্রতিপালন এখন শুধু শখ ও বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং তা এখন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। কবুতর বাড়ি ও পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা ছাড়াও অল্প খরচে এবং অল্প ঝামেলায় প্রতিপালন করা যায়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বলকারক হিসেবে সদ্যরোগমুক্ত ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। রোগীর পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে কবুতর পালন করছেন।

কবুতর প্রতিপালনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব 
বাংলাদেশে সাধারণত কবুতরকে মাংস উৎপাদনের জন্য পালন করা হয়। কবুতরের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু, বলকারক ও রোগীর পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয় যা সাধারণ মানুষের নিকট অতি প্রিয়। 

১। ন্যুনতম ব্যয়ে প্রতিপালন:
হাঁস-মুরগীর তুলনায় কবুতর পালন মোটেও ব্যয়বহুল নয়। স্বল্প পুঁজি, অল্প খরচ ও সীমিত স্থানে অতি সহজে কবুতর পালন করা যায়। 

২। কবুতরের ঘর নির্মাণে ন্যুনতম ব্যয়:
গ্রামাঞ্চলে অত্যন্ত সাধারণ পদ্ধতিতে পারিবারিকভাবে কবুতর প্রতিপালন করা যায়। বাড়ির চালের বাড়তি অংশে কাঠ বা বাঁশের ঘর বা খোপের মতো করে দিলে এখানে আপনাআপনি কবুতর এসে বাসা বাঁধে এবং বংশবৃদ্ধি করে। এতে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। এভাবে কবুতর প্রতিপালন করে অনেক পরিবার যেমন তাদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারে তেমনি অন্যভাবে নিয়মিত কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে কবুতর প্রতিপালনেও সীমিত ব্যয় হয়। এদের ঘরের অধিকাংশই কাঠ ও বাঁশের তৈরি হয়ে থাকে। সর্বোপরি এজন্য খুব কম জায়গার প্রয়োজন হয়। 

৩। ডিম ফোটার হার:
কবুতরের ক্ষেত্রে ডিম ফোটার হার ৯৮%, যা মুরগির ক্ষেত্রে প্রায়শ ৮০-৮৫% হয়ে থাকে। এদের ডিম ফোটানোর জন্য ইনকিউবেটর বা এজাতীয় কোনো ব্যয়বহুল যন্ত্রের প্রয়োজন হয় না। 

জেনারেশন বিরতি
স্বল্প বয়সে এদের পুনরুৎপাদন শুরু হয়। তাই একজন উৎপাদনকারী অল্প সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভবান হতে পারে। একটি কবুতর সাধারণত বছরে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৬-১৮ দিন সময় লাগে।

কবুতরের জাত
বহুবিচিত্র ধরনের নানা জাতের কবুতর রয়েছে। আমাদের দেশে ২০ টিও অধিক জাতের কবুতর আছে বলে জানা যায়। নিম্নে প্রধান কয়েকটি জাত সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

১। গোলা
এই জাতের কবুতরের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। আমাদের দেশে এ জাতের কবুতর প্রচুর দেখা যায় এবং মাংসের জন্য এটার যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে। ঘরের আশেপাশে খোপ নির্মাণ করলে এরা আপনাআপনি এখানে এসে বসবাস করে। এদের বর্ণ বিভিন্ন সেডযুক্ত ধূসর এবং বারড-ব্লু রংয়ের। এদের চোখের আইরিস গাঢ় লাল বর্ণের এবং পায়ের রং লাল বর্ণের হয়।
২। গোলী
গোলা জাতের কবুতর থেকে গোলী জাতের কবুতর ভিন্ন প্রকৃতির। এ জাতের কবুতর পাকিস্তানের লাহোর ও ভারতের কলকাতায় বেশ জনপ্রিয় ছিল। এদের লেজের নীচে পাখার পালক থাকে। ঠোঁট ছোট হয় এবং পায়ে লোম থাকে না। এদের বর্ণ সাদার মধ্যে বিভিন্ন ছোপযুক্ত।
৩। টাম্বলার
এসব জাতের কবুতর আকাশে ডিগবাজী খায় বলে এদের টাম্বলার বলে। আমাদের দশে এই জাতটি গিরিবাজ নামে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ। মনোরঞ্জনের জন্য আমাদের দেশে এদের যথেষ্ট কদর রয়েছে।
৪। লোটান
লোটন কবুতরকে রোলিং (rolling) কবুতরও বলা হয়। গিরিবাজ কবুতর যেমন শূন্যের উপর ডিগবাজী খায়, তেমন লোটন কবুতর মাটির উপর ডিগবাজী খায়। সাদা বর্ণের এই কবুতরের ঘুরানো ঝুঁটি রয়েছে। এদের চোখ গাঢ় পিঙ্গল বর্ণের এবং পা লোমযুক্ত।
৫। লাহোরী
আমাদের দেশে এই কবুতরটি শিরাজী কবুতর হিসেবে পরিচিত। এদের উৎপত্তিস্থল লাহোর। এদের চোখের চারদিক থেকে শুরু করে গলার সম্মুখভাগ, বুক, পেট, নিতম্ব, পা ও লেজের পালক সম্পূর্ণ সাদা হয় এবং মাথা থেকে শুরু করে গলার পিছন দিক এবং পাখা রঙ্গীন হয়। সাধারণত কালো, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী ইত্যাদি বর্ণের কবুতর দেখা যায়।
৬। কিং
কিং জাতের কবুতরের মধ্যে হোয়াইট কিং এবং সিলভার কিং আমেরিকাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিতে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কিং জাতের কবুতর প্রদর্শনী এবং স্কোয়াব (ঝয়ঁধন বাচ্চা) উৎপাদনে ব্যবহার হয়। এছাড়াও রয়েছে ব্লু রেড এবং ইয়েলো কিং। এই জাতের কবুতর মূলত প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয়।
৭। ফ্যানটেল
এটি অতি প্রাচীন জাতের কবুতর। ফ্যানটেল জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে। এ জাতের কবুতর লেজের পালক পাখার মত মেলে দিতে পারে বলে এদেরকে ফ্যানটেল বলা হয়। এদের রং মূলত সাদা তবে কালো, নীল ও হলুদ বর্ণের ফ্যানটেল সৃষ্টিও সম্ভব হয়েছে। এদের লেজের পালক বড় হয় ও উপরের দিকে থাকে। পা পালক দ্বারা আবৃত থাকে। এ জাতের কবুতর প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত হয় এবং দেশ বিদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
৮। জ্যাকোবিন
এই কবুতরের মাথার পালক ঘাড় অবধি ছড়ানো থাকে যা বিশেষ ধরনের মস্তকাবরণের মত দেখায়। এদের উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে এদের আদি জন্মস্থান ভারত বলেই ধারণা করা হয়। এই কবুতর সাধারণত সাদা, লাল, হলুদ, নীল ও রূপালী বর্ণের হয়। এদের দেহ বেশ লম্বাটে। চোখ মুক্তার মত সাদা হয়।
৯। মুকি
এ জাতের কবুতরের গলা রাজহাঁসের মত পিছন দিকে বাঁকানো এবং কম্পমান অবস্থায় থাকে। মুকি জাতের কবুতরের উৎপত্তি ভারতে বলে ধারণা করা হয়। এদের উভয় ডানার তিনটি উড়বার উপযোগী পালক সাদা হয় যা অন্য কোনো কবুতরে দেখা যায় না। এ জাতের কবুতরের মাথা সাদা, বুক খুব একটা চওড়া নয় তবে উঁচু ও বেশ কিছুটা সামনের দিকে বাড়ানো থাকে। সাদা, কালো এবং নীল বর্ণের এই কবুতরের পায়ে লোম থাকে না। 

কবুতরের Tetanus বা ধনুষ্টংকার

একজন খামারি কে রোগ বালাই,প্রতিকূল আবহাওয়া ইত্যাদি প্রতিনিয়ত নানা বিরূপ অবস্থার সাথে লড়াই করতে হয়ঠিক যেন একজন চালক মূল সড়কে গাড়ি চালানোর সময় একজন চালককে অন্য দিকে দৃষ্টি সরানর সুযোগ থাকে না তেমনিআর যখন সমস্থ প্রতিকূল অবস্থা থেকে একজন খামারি সফল হয়, তখন তার অংশও কার সাথে ভাগ করে চাইবেন নাকারন এটা তার একার কৃতিত্ব আর এই আনন্দ যা ভাষাই প্রকাশ করা যাবে নাআর আই সফলতার পেছনে যে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা আছে তার মধ্যে ধনুষ্টঙ্কার দেশে -১৫ দিনের কবুতরের বাচ্চা মারা যাবার পেছনে ৭০% ভাগ আই রোগ দায়িআই রোগের মূল কারন হিসাবে Colestridium Tetani নামক জীবাণুএতি অক্সিজেন ছাড়াও বেচে থাকতে পারেলক্ষণ কারন বিশ্লেষণ করলে আই রোগকে ভাগে ভাগ করা যায়ঃ১)আঘাত জনিত) কাটা বা ক্ষত জনিত)অতিরিক্ত ঠাণ্ডা জনিতধনুষ্টঙ্কার একটি স্নায়ুবিক রোগতাই আই রোগ নির্ণয় করতে হলে এর ইতিহাস শুনতে হবে লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে 

লক্ষণ কারনঃ

1)
সামান্য শব্দ হাততালি দিলে সমস্থ শরীর কেপে উঠে
) খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দুর্বল হয়ে মারা যায়
) কবুতর ঠিকমত মাথা তুলতে পারে না,মাথা হেত করে থাকে
) ঘাড় শক্ত হয়ে যায় ছটফট করতে করতে শরীর ঘাড় বেকে গিয়ে মারা যায়
) আঘাত লেগে বা কেটে গিয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ভিতরে জীবাণু প্রবেশ করে এই রোগে আক্রান্ত হয়
) বাচ্চা দিম থেকে ফুটার পর নাভি সংক্রমন থেকে বা স্যাঁতস্যাঁতে বাতি থেকে এই রোগ হয় 
) পুরান লোহা, পেরেক ফুতে বা টিনে কেটে গিয়ে এই রোগ হতে পারে
) অত্যান্ত গরমে,বা ঘাম বন্ধ হয়ে, ঠাণ্ডা লেগে এই রোগ হতে পারে
) দেহ আস্তে আস্তে ঠাণ্ডা হয়ে অবস হয়ে যায়
১০) পায়খানা বন্ধ হোয়ে যায় 
১১)গায়ের লোম লেজ খাড়া হয়ে যায়
১২) শ্বাসপ্রশ্বাসে সাহায্য করে এমন পেশী শক্ত হয়ে যায়
১৩)মাঝে মাঝে বিশেষ কিছু পেশীর অতিরিক্ত কম্পন অনুভূত হয়
১৪) শিরদাঁড়া উত্তেজিত হয়েও এই রোগ হতে পারে 
১৫)অনেক সময় ঠোট বেকে যায় শরীর ওবোশ হয়ে যায় দাড়াতে পাড়ে না
১৬) রোগ অধিক হলে খূচূণীর মতো অবস্থা হয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ য়োয়ে মারা যেতে পারে

চিকিৎসা প্রতিরোধ অণুসাঙ্গিক ব্যবস্থাঃ

)নীরব কোম আলো সম্পন্ন ঘরে আক্রান্ত কবুতর কে রাখতে হোবে যাতে,বাইরের কোণো শব্দ না পৌছে 
) মেরুদণ্ডের উপর একটুকরা বরফ কাপড়ে পেঁচীয়ে হালকা করে প্রলেপ ডীটে হবে
) ক্ষতস্থান আণ্টীশেপ্টীক দিয়ে ধুয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিতে হবে 
) তলপেটে একবার গরম ঠাণ্ডা শেক দিতে হবে যাতে পায়খানা শুরু হয়
) তরল খাবার দিতে হবে
) চালের স্যালাইন দিতে হবে(যদি - দিনের বাচ্চা হয় তাহলে পড় দিয়ে - ফোটা করে খাওয়াতে হবেআড় অবশ্যয় তা হালকা গরম হতে হবে) 
)বাচ্চা ডীম থেকে ফুটার পর অবশ্যয় হেক্সীশোল বা পোভীশেফ দিয়ে ণাভী ভালো করে মূছে দিতে হবে
) বাটী যাতে ভীজা না থাকে শে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে
) বাচ্চা হবার পর Tetanus বা ধনুষ্টংকার থেকে বাচতে হোমিও Hypericum 200 কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে মিক্স করে কয়েক ফোটা খওয়াতে হবে 

মনে রাখতে হবে অনেক সময় কন লক্ষণ ছারাই বাচ্চা Tetanus বা ধনুষ্টংকার আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেতাই সে থেকে মুক্তি পেতে হোমিও ঔষধ প্রতিরোধক হিসাবেও ব্যাবহার করা যেতে পারে আর দিম থেকে বাচ্চা ফুটার পর থেকে যদি এক্টু আতিরিক্ত যত্ন নেওয়া হয় তাহলে আই অনাখংকিত ঘটনা এড়ানো সম্ভব এটা যে সুধু বাচ্চাদের হবে তাও ঠিক না পূর্ণ বয়স্ক কবুতরেরও দিম পাড়ার সময় বা অন্য জেকন সময়ও আই রগে আক্রান্ত হতে পারে তাই সকল ক্ষেত্রেই সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি

 

© 2013 Pigeon | Bird | . All rights resevered. Designed by Templateism

Back To Top